কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
জেলার তৃনমূলের উন্নয়নের কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। স্থানিয় সরকার শাখাসহ গ্রামিন পর্যায়ের সব উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হয় এ কর্মকর্তার মাধ্যমে। জেলার ৮ উপজেলায় ১ জন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ৪ উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় উন্নয়নের গতি হ্রাস পাচ্ছে। ফলে জেলার ৭১টি ইউনিয়নের উন্নয়ন কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যে ৪ উপজেলায় কর্মকর্তা রয়েছে তাদের একই উপজেলায় অনেক দিন আবার ঘুরে ফিরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্ব পালন করায় দূর্নীতির অলিগলির শাখা বিস্তৃতি ঘটছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিভিন্ন অভিযোগ অনিয়ম প্রমানিত হওয়ার পরও স্বপদে বহাল থাকায় কয়েকটি অফিসে চলছে নিরব লুটতরাজ। প্রয়োজনের সময় অনেক পিআইও কে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন না পাওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানাযায়, জেলার ৮ উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ন ৮ জন পিআইও কর্মরত থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪ জন। তবে কক্সবাজারের ৮ উপজেলার কাজ চালানো হচ্ছে উক্ত ৪ জন দিয়ে। পিআইও’র পদ শূন্য থাকা উপজেলাসমুহ হল টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং রামু। ৪ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পিআইও অতিরিক্ত দায়িত্বে ( চলতি দায়িত্ব ) পদশূন্য থাকা উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে উখিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পবিত্র চন্দ্র মন্ডল অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন টেকনাফের। কক্সবাজার সদরের মোঃ শফিউল আলম সাকিবকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহেশখালী উপজেলার। পেকুয়ার পিআইও সুব্রত দাশকে পালন করতে হচ্ছে কুতুবদিয়া উপজেলার। পাশাপাশি চকরিয়ার পিআইও মোঃ জোবাইর হোসেন পালন করছেন রামু উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব। পিআইও’র পদ শূন্য থাকা ৪ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে যদিও কাগজে কলমে এর প্রভাব খুব একটা বুঝতে দিচ্ছেন না কর্মকর্তাগণ। তবে ইউনিয়ন পরিষদের অনেক চেয়ারম্যান যথা সময়ে কর্মকর্তাদের না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত হলেও অনেক চেয়ারম্যান চেক যথাসময়ে উত্তোলন করতে পারছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানাযায়, উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে গ্রামিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে টাকা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, কালভার্ট নির্মান, ভিজিডি,ভিজিএফ, কর্মসৃজন প্রকল্প, দূর্যোগ কালিন প্রকল্পসহ ১৬টি উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে থাকেন পিআইও অফিস। উক্ত ৪ উপজেলায় কর্মকর্তা সংকটের কারনে উক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন এবং দাপ্তরিক কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে টেকনাফে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে তাদের সময় দিতে গিয়ে দাপ্তরিক কাজ চরমভাবে বিঘœ ঘটছে।
রামু উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, আমাদের উপজেলার পিআইও থাকেন সপ্তাহে ২ দিন। আমরা অনেক সময় চেকে স্বাক্ষর নিতে গিয়ে পাওয়া যায়না। এমন অনেক সময় আসে পিআইও বেশি ইমার্জেন্সি হয়ে যায় কিন্তু তিনি অন্য উপজেলায় দায়িত্ব পালন করার কারনে আমাদের সময় দিতে পারেননা। ফলে আমাদের মত সব উপজেলায় এ রকম বিঘœ ঘটছে গুরুত্বপূর্ণ কাজে।
চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায় কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন যিনি রামু উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বলেন, আমি নিজের উপজেলার দায়িত্ব পালন করার পরও রামুতে সপ্তাহে ২ দিন করে সময় দিই, অনেক সময় সরকারি ছুটির সময় ও দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক ফাইল জমে যায়। ২ জনের কাজ কি ১ জন করে শেষ করা সম্ভব এমন প্রশ্ন করেন তিনি। তবে তিনি অর্পিত দায়িত্ব পালনে কাপর্ণ্য করেন না বলেও জানান। ২ উপজেলার টানাটানিতে অবশ্য প্রকল্প যথাযথ বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব নয় ।
এদিকে রামুতে ২০১৪ সাল থেকে , কুতুবদিয়ায় ২০১০ সাল থেকে, টেকনাফে ৪ মাস যাবৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ৪ উপজেলার পিআইও ঘুরে ফিরে জেলার ৮ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম করলে ও এর প্রভাব পড়েনা । নিরুপায় হয়ে ৪ জনের উপরই আস্থা রাখতে হচ্ছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের । দূর্নীতি প্রমানিত হওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে থাকছেন কর্মকর্তা সংকটের সুযোগে। ফলে জেলার ৭১টি ইউনিয়নের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে “পুকুরচুরি” হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
পিআইও সংকটের বিষয়ে জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান কর্মকর্তা মোঃ রইসউদ্দিন মুকুল বলেন, ৪ উপজেলার পিআইও দিয়ে ৮ উপজেলার দায়িত্ব পালন অনেক কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে টেকনাফে এবং উখিয়ায় রোহিঙ্গা আসার পর অফিসারদের সেদিকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। উক্ত ২ উপজেলায় যেখানে সচিব পর্যায়ের প্রায় ১৪/১৫ জন কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন সেখানে ৮ উপজেলায় ৪ জন পিআইও দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দাপ্তরিক কাজ করতে কত যে বেগ পেতে হচ্ছে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। তিনি কক্সবাজারের ৪টি উপজেলার জন্য পিআইও নিয়োগে দ্রুত মন্ত্রনালয়কে অবহিত করবেন বলেও জানান।
পাঠকের মতামত: